উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র কানাডা। এখন পর্যন্ত দেশটির অনেক এলাকা কার্যত মানবসভ্যতার স্পর্শের বাইরেই রয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ দেশগুলোর একটি কানাডা। শুধু চাকরি, পড়াশোনা বা অভিবাসন নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য এটি।
বিস্তীর্ণ স্থলভাগ, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কানাডার অনেক মিল। কিন্তু অমিলও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ ঐতিহ্য এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকলেও কানাডার লোকেরা ব্রিটিশ ঐতিহ্যের জন্য বেশ গর্ব করে। বিশেষ করে ইউরোপের দু’টি দেশ ব্রিটেন আর ফ্রান্সের অভিবাসীদের মাধ্যমে কানাডার ইতিহাস আর ঐতিহ্য যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছে। ফরাসি এবং ইংরেজি দুটো ভাষাই প্রচলিত কানাডায়। বিশেষ করে কানাডার কুইবেক এবং নিউ বার্নসউইকের অধিবাসীরা প্রধানত ফরাসী ভাষায় কথা বলে। কাজেই যারা কানাডা যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের এই দু’টি ভাষার একটি অবশ্যই জানতে হবে।
বিশাল এই দেশটির জনসংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। দক্ষ কূটনীতি, মানবাধিকার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তিরক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিশ্ব মঞ্চে বেশ প্রভাবশালী দেশ কানাডা। কানাডার মানুষের জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত, মানবাধিকার মূল্যবোধের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক অধিকার রক্ষা প্রভৃতি সূচকে সব সময়ই প্রথম সারির দেশ কানাডা।
স্থানীয় সময়
প্রায় এক কোটি বর্গ মাইলের বিশাল দেশ হওয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবস্থা অনুসরণ না করে মোট ছয়টি সময় এলাকা বা টাইম জোনে ভাগ করা হয়েছে কানাডাকে। গ্রিনিচ মান সময় থেকে কানাডার স্থানীয় সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত পিছিয়ে থাকতে পারে। এছাড়া গ্রীষ্মে এখানকার ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে নেয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত তথ্য:
রাজধানী: অটোয়া
সবচেয়ে বড় শহর: টরেন্টো
অফিসিয়াল ভাষা: ইংরেজি এবং ফরাসি, এছাড়া আরও কয়েকটি ভাষাকে স্থানীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
আয়তন: ৯৯,৮৪,৬৭০ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা: ৩,৫৬,৭৫,৮৩৪ (২০১৪ সালের হিসাব)
মুদ্রা: কানাডীয় ডলার(CAD)
মুদ্রা বিনিময় হার: ১ কানাডীয় ডলার = ৬২ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়) মার্চ ২০১৫ এর তথ্য
আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড: +১
ইমার্জেন্সি ডায়াল: ৯১১
ইন্টারনেটে কান্ট্রি ডোমেইন: .ca
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা: ১২০ ভোল্ট, ৬০ হার্জ (টাইপ ‘এ’ প্লাগ)
ধর্ম:
রোমান ক্যাথলিক ৩৮.৭%
প্রটেস্টান্ট ১৭%
কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না: ২৩.৯%
অন্যান্য ১০%
পরিমাপ পদ্ধতি:
কানাডায় মেট্রিক পদ্ধতি চালু হলেও বয়স্কদের মধ্যে এখনো পুরনো ব্রিটিশ পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়। তাদের মধ্যে ফুট, মাইল প্রভৃতি এককের ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়া অনেকেই তাপমাত্রা বোঝাতে এখনো ফারেনহাইট একক ব্যবহার করেন। অবশ্য আবহাওয়া বার্তায় সেলসিয়াস এককই ব্যবহার করা হয়। তবে নায়াগ্রার মত কিছু সীমান্ত এলাকায় ফারেনহাইট এককে আবহাওয়া বার্তা দেয়া হয়।
কানাডার আবহাওয়া:
বিশাল দেশ হওয়ায় কানাডার আবহাওয়া সম্পর্কে এক বাক্যে বলা কঠিন। দেশটির অধিকাংশ এলাকায় শীতকালটা বেশ কঠিন। কিছু কিছু এলাকায় জুলাই আগস্টেও গড় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত হয়। কিন্তু দক্ষিণ অন্টারিও’র মত জনবহুল জায়গাগুলোতে আবহাওয়া কিছুটা সহনীয়। আবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শীতকালের তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের ওপরে থাকে।
কানাডার অধিকাংশ শহরাঞ্চল যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। কাজেই শীতকাল ছাড়া কানাডার শহরগুলোয় বেড়াতে গেলে তুষার ঝড়ের মত প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে হবে না। কানাডার জনবহুল এলাকাগুলোতে গ্রীষ্মকালটা বেশ সংক্ষিপ্ত হয়। টরেন্টো, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভৃতি এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
0 comments:
Post a Comment